উখিয়া নিউজ ডেস্ক:: কারাবন্দি জেএমবি সদস্য ফুয়াদ ওরফে মো.বুলবুলের লেখা একটি চিরকুট নিয়ে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু আক্তারের হত্যাকাণ্ড অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুলবুলকে রিমাণ্ডে নিয়ে চিরকুটটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদেরও উদ্যোগ নিয়েছে পিবিআই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত মাসে বুলবুলের লেখা ওই চিরকুটটি ফাঁস হয়েছে। এতে বুলবুলদের উপর কথিত নির্যাতন এবং নিজেকে ‘আইএস’ দাবি করা জেএমবি নেতা জাবেদকে খুনের অভিযোগ এনে পুলিশ সদস্যদের হত্যার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন হাত ঘুরে চিরকুটটি পৌঁছেছে পিবিআই এবং একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। গত ৫ জুন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম ওরফে মিতু আক্তারকে হত্যার আগে চিরকুটটি অবশ্য নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছেও পৌঁছেছিল। কিন্তু এ নিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানের মধ্যেই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে যায়।
হত্যার ঘটনা অনুসন্ধানে নেমে পিবিআই এখন চিরকুটের আহ্বান অনুযায়ী জেএমবি বাবুল আক্তারের উপর প্রতিশোধ নিতে তার স্ত্রী মিতুকে খুন করেছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখছে। মূলত পিবিআই এখন এই একটিমাত্র প্রশ্নেই এগোচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইর এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ফাঁস হওয়া চিরকুটে দেখা যাচ্ছে বাবুল আক্তারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা জঙ্গিদের আছে। এখন বাবুল আক্তারকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে খুন করা হয়েছে কিনা, প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এই খুন কিনা এসব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি।
তবে চিরকুটের বিষয়ে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার (দক্ষিণ) মো.কামরুজ্জামান।
২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগরে তৎকালীন অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম অভিযান চালিয়ে বুলবুলসহ পাঁচ জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল। এদের মধ্যে জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিস্ফোরক শাখার প্রধান মো.জাবেদ ওরফে জায়েদকে নিয়ে ডিবি আরেকটি অভিযানে গেলে সে গ্রেনেড বিস্ফোরণে মারা যায়। বুলবুলসহ বাকি চার সদস্যের কাছ থেকে পুলিশ জঙ্গি কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
ফাঁস হওয়া চিরকুটে জাবেদকে ‘হত্যা’ এবং জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের অভিযোগ এনে বাবুল আক্তারসহ গ্রেফতারকারী পুলিশ সদস্যদের হত্যার আহ্বান জানিয়েছে ফুয়াদ ওরফে মো.বুলবুল। বর্তমানে কারাবন্দি বুলবুল জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে জানিয়েছিল নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
উদ্ধার হওয়া চিরকুটের ভিত্তিতে হত্যার আহ্বান জানানো জেএমবি নেতা ফুয়াদ ওরফে মো.বুলবুলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে সাতদিনের রিমাণ্ডের আবেদন জানিয়েছে পিবিআই।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, বুলবুলকে বাকলিয়া থানার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমাণ্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জুন) এ আবেদনের উপর শুনানি হবে।
খোয়াজনগর থেকে গ্রেফতার হওয়া পাঁচ জঙ্গি হল, মো. জাবেদ (২৪), ফুয়াদ ওরফে মো.বুলবুল (২৬), সুজন ওরফে বাবু (২৫), মাহবুব (৩৫) এবং সোহেল ওরফে কাজল (৩৫)। এদের মধ্যে জাবেদ গ্রেনেড বিস্ফোরণে মারা গেছে। বাকি চারজন বর্তমানে কারাগারে আছে।
ফাঁস হওয়া চিরকুটে জাবেদের নাম জায়েদ হিসেবে উল্লেখ আছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তার মৃত্যুর বিষয়ে চিরকুটে লেখা আছে- ‘ভাই, জায়েদ ভাইকে তারা গলার সাথে গ্রেনেড বেঁধে দিয়ে ব্লাস্ট করে শহীদ করে দেয়। তার পিছনে বড় কারণ হল সে নিজেকে আইএস দাবি করেছিল।’
চিরকুটে লেখা আছে, ‘আমার থেকে কোন দলের নাম পায়নি কিন্তু আমাদের দোকানের ছেলেকে যখন ধরেছিল তখনই দলের নাম প্রকাশ পেয়েছে। দোকানের ওই ছেলেটা অনেক তথ্য দিয়েছিল যা আমরা জানতাম না। ’
দুই পৃষ্ঠার চিরকুটের শেষ পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্যারায় জায়েদকে হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিশোধে পুলিশ সদস্যদের হত্যার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘ভাই, আপনাদের প্রতি আমার আকুল আবেদন, আপনারা ওই জালেম দোসরদের হত্যা করতে থাকুন এবং তাদের অফিসে গিয়ে হলেও হামলা করুন। তারা যদি ছুটিতে যায় তখন হলেও তাদের হত্যা করুন এবং প্রতিশোধ নিন। ’
এতে আরও উল্লেখ আছে, ‘ভাই, আপনারা ভাইদের ভুল বুঝবেন না কারণ আমি দেখেছি তাদের নির্যাতন। তাই আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কাজ করুন।’
চিরকুটের কয়েক লাইন পরপর তাদের ভুল না বোঝার আকুতি জানিয়েছে বুলবুল।
চিরকুটটি কাকে সম্বোধন করে লেখা হয়েছে সেটি উল্লেখ না থাকলেও তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করছে, জেএমবির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেই চিরকুটটি পাঠানো হচ্ছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি ও মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, জেএমবি যদি চিরকুটটি লিখে থাকে তবে বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার সঙ্গে এর যোগসূত্র আছে কিনা সেটা নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। আশা করি বুলবুলকে রিমাণ্ডে নেয়ার অনুমতি দেবেন আদালত। তখন তাকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। সূত্র বাংলানিউজ
পাঠকের মতামত